কম্পিউটার নেটওয়ার্ক:
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো এমন একটি ব্যবস্থা বা সিস্টেম যেখানে একাধিক কম্পিউটার একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে তথ্য, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ইত্যাদি রিসোর্স শেয়ার করে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্য
হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ারঃ
একটি অফিসের পাঁচটি কম্পিউটারের জন্য পৃথক পাঁচটি প্রিন্টার সেটআপ করার পরিবর্তে কম্পিউটারগুলোর সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে একটি প্রিন্টার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করলে নেটওয়ার্কের অধিনস্ত সকল কম্পিউটার প্রিন্টারটি ব্যবহার করতে পারবে। একেই বলা হয় হার্ডওয়্যার(প্রিন্টার) রিসোর্স শেয়ার।
সফটওয়্যার রিসোর্স শেয়ারঃ
একটি অফিসের পাঁচটি কম্পিউটারের জন্যই কমন যে সফটওয়্যারগুলো প্রয়োজন তা প্রতিটি কম্পিউটারে ইন্সটল করার পরিবর্তে কম্পিউটারগুলোর সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে সফটওয়্যারগুলো শেয়ার করা যায়। ফলে আর্থিক সাশ্রয় হয়।
ইনফরমেশন রিসোর্স শেয়ারঃ
একটি অফিসের কম্পিউটারগুলোর সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে একে অপরের সাথে খুব সহজেই ইনফরমেশন বা তথ্য শেয়ার করা যায়।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর প্রকারভেদ:
মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আলোচনাঃ
প্রাইভেট নেটওয়ার্ক :
সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মালিকানাধীন নেটওয়ার্ককে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলা হয়। যেকেউ ইচ্ছা করলেই এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে না। এই ধরণের নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা অত্যন্ত মজবুত থাকে এবং ট্রাফিক সাধারণত কম থাকে।
যেমন- বিভিন্ন ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অথবা একটি সংস্থার ইন্ট্রানেট।
পাবলিক নেটওয়ার্ক:
এটি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে যেকেউ চাইলেই অর্থের বিনিময়ে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে।
যেমন- বিভিন্ন মোবাইল ফোন কিংবা টেলিফোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম অথবা ইন্টারনেট।
সার্ভিস প্রদান ও নিয়ন্ত্রন কাঠামোর ভিত্তিতে বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আলোচনাঃ
ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক কী?
এটি একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং মডেল যা সার্ভার কম্পিউটার এবং কিছু টার্মিনাল / ক্লায়েন্ট কম্পিউটার সমন্বয়ে গঠিত। এই নেটওয়ার্কিং মডেলে সকল ধরণের প্রসেসিং এবং নিয়ন্ত্রণ সার্ভার কম্পিউটার দ্বারা সম্পন্ন হয়। সার্ভার কম্পিউটার একটি বিশেষায়িত কম্পিউটার যা নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং নেটওয়ার্ক পরিচালনার মতো সকল কার্য সম্পাদন করে। এটি নেটওয়ার্কের রিসোর্সসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং নেটওয়ার্কের অন্যান্য কম্পিউটারগুলোকে সেবা প্রদান করে। অপরদিকে ক্লায়েন্ট কম্পিউটারগুলো সার্ভার থেকে রিসোর্স ব্যবহার করে বা সেবা গ্রহণ করে। ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ককে সার্ভার-বেজড নেটওয়ার্কও বলা হয়।
সার্ভারের সংখ্যা ও স্টোরেজ মিডিয়ার উপর ভিত্তি করে ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ককে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- সেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক
- ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্ক
সেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্ক কী?
সেন্ট্রালাইজড নেটওয়ার্কে এক বা একাধিক ক্লায়েন্টসমূহ সরাসরি একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ একটি কেন্দ্রিয় সার্ভার এবং কিছু টার্মিনাল বা ক্লায়েন্ট নিয়ে গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সার্ভার সকল প্রসেসিং এবং নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে। আর টার্মিনাল বা ক্লায়েন্টের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সার্ভারে যুক্ত হয়ে সার্ভিস গ্রহণ করে।
ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্ক কী?
ডিস্ট্রিবিউটেড মেইনফ্রেম মেনফ্রেম সার্ভার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অন্যান্য সার্ভারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্লায়েন্ট সার্ভার কম্পিউটারগুলো তাদের নিজস্ব ডেটা প্রক্রিয়া করে এবং মেইনফ্রেমে সর্বশেষ আপডেটগুলো প্রেরণ করে। কিছু প্রসেসিং মেইনফ্রেম সার্ভার কম্পিউটার দ্বারাও সম্পন্ন হয়।
পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক কী?
এই ধরণের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও সার্ভার ব্যবহৃত হয় না এবং প্রতিটি নোড একইসাথে ক্লায়েন্ট এবং সার্ভার উভয় হিসেবে কাজ করে। এই ধরণের নেটওয়ার্কে, প্রতিটি নোড সেবার জন্য রিকোয়েস্ট এবং রেসপন্ড উভয় প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এবং রিসোর্স অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারে। প্রতিটি কম্পিউটার তার ডেটার নিরাপত্তা বিধানে নিজেই দায়ী থাকে। এই ধরণের নেটওয়ার্কে সর্বাধিক ২৫ টি কম্পিউটার সমর্থন করে।
ক্লায়েন্ট সার্ভার এবং পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের মধ্যে পার্থক্য:
হাইব্রিড নেটওয়ার্ক :
হাইব্রিড নেটওয়ার্ক যা পিয়ার-টু-পিয়ার এবং ক্লায়েন্ট-সার্ভার উভয় নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। হাইব্রিড নেটওয়ার্ক পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কে সার্ভার-ভিত্তিক নেটওয়ার্কগুলোর কর্মক্ষমতা, নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতার সাথে গ্রুপ-ওয়ার্কের(Group Work) বৈশিষ্ট্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করে। হাইব্রিড নেটওয়ার্ক সার্ভারগুলোর কেন্দ্রিয় সকল পরিষেবা সরবরাহ করে তবে তারা ব্যবহারকারীকে ওয়ার্কগ্রুপের(Workgroups) মধ্যে তাদের নিজস্ব রিসোর্স শেয়ার এবং পরিচালনা করতে দেয়।
হাইব্রিড নেটওয়ার্কের সুবিধা:
১. ক্লায়েন্ট সার্ভার অ্যাপ্লিকেশনটি এখনও কেন্দ্রীয়ভাবে অবস্থিত এবং পরিচালিত।
২. ব্যবহারকারীরা তাদের কম্পিউটার রিসোর্সের লোকাল অ্যাক্সেস নির্ধারণ করতে পারেন।
৩. ওয়ার্কগ্রুপগুলো(Workgroups) নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটরের সহায়তা ছাড়াই রিসোর্সসমূহ পরিচালনা করতে পারে।
হাইব্রিড নেটওয়ার্কের অসুবিধা:
১. ব্যবহারকারীদের একাধিক পাসওয়ার্ড মনে রাখার প্রয়োজন হতে পারে।
২. ফাইলগুলো নকল(duplicated) করা যায় এবং কম্পিউটারগুলোর মধ্যে শেয়ার করা ফোল্ডার এবং সার্ভারের ফাইলগুলো ওভাররাইটের পরিবর্তন করা যায়।
৩. ওয়ার্কস্টেশনে সংরক্ষিত ফাইলগুলোর ব্যাক-আপ থাকে না।
ক্লাউড কম্পিউটিং:
ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করা। এসব সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে ডাটা স্টোরেজ, সার্ভার, ডাটাবেজ, নেটওয়ার্কিং এবং সফ্টওয়্যারসমূহ। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার নিজেদের কম্পিউটারে না রেখে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভারে জমা করে রাখতে পারি। পরবর্তীতে সেখান থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো অ্যাক্সেস করতে পারি। অতীতে যদি আমাদের কম্পিউটার সংক্রান্ত কোনো কাজ করা লাগতো তাহলে সেখানে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কম্পিউটারও কেনা লাগতো। কিন্তু কিছুদিন পর যখন প্রয়োজন শেষ হয়ে যেতো তখন কম্পিউটারগুলি অলস পরে থাকতো। অর্থাৎ আমাদের মোটা অংকের টাকা অপচয় হয়ে যেতো। ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা দূরভীত করা সম্ভব। ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে আমরা এখন তাৎক্ষণিক সেবা পেতে পারি। এবং এটা প্রাই pay-as-you-go pricing (যতটুকু ব্যবহার ততটুকু খরচ) হিসেবে পেতে পারি। যার মাধ্যমে আমাদের অনেক সাশ্রয় হবে। আমরা নিচে ক্লাউড কম্পিউটিং কী এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো তাহলে আপনার জন্য বোঝা আরো অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদ: দিনে দিনে ক্লাউড কম্পিউটিং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সার্ভিসের ধরনও পরিবর্তীত হচ্ছে তাই এটিকে আমরা বিভিন্নভাবে শ্রেণীবন্ধও করতে পারি।
ক্লাউড বেজড ডিপ্লয়মেন্ট কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
- পাবলিক ক্লাউড
- প্রাইভেট ক্লাউড
- হাইব্রিড ক্লাউড
- Infrastructure as a Service (IaaS)-অবকাঠামোগত সেবা
- Software as a Service (SaaS)-সফটওয়্যার সেবা
- Platform as a Service (PaaS)-প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক সেবা